// রাষ্ট্র তুমি ... // 
১৮ জুলাই, ২০১৩

© প্রীতম অংকুশ 


[ অনেক কথা বলার থাকে। হয়তো বলা যায়, হয়তো বলা যায় না। তবে গানের কথার কোন সীমা থাকে না ... তাই গানে গানেই আমার কথা, আমাদের কথা ...]


আমি জানি তোমার শরীর জুড়ে শোষণের কাহিনী,
শুরু থেকে চলছে আজও বঞ্চনার গ্লানি !

যায় কি আসে আমার যদি কেউ হয় ফেলানী,
বিশ্বজিতের রক্ত আমায় কখনো কাঁদায়নি !

তাই, বাঁচার মত বাঁচিনি বলেই বেঁচেও মরে আছি -
সময়কালে রুদ্ধশ্বাসে ধুঁকে ধুঁকে মরছি ...

আমি দেখি তুমি লুট করে নাও জনতার সম্পদ,
দালালী, পাচার, চোরাকারবারী - তোমার সম্বল !

ফুলে ফেঁপে ওঠো যত তুমি নিঃস্ব ততই বাড়ে,
তোমার সংখ্যা কম তবু শুধু সংখ্যালঘুই মরে !
তেল - গ্যাস থেকে সুন্দরবন বাদ গেলো না তো কিছুই -
আমি তাও ঠিকই চুপ করে থাকি, ছুটেছি নিজের পিছু ...

তাই, বাঁচার মত বাঁচিনি বলেই বেঁচেও মরে আছি -
সময়কালে রুদ্ধশ্বাসে ধুঁকে ধুঁকে মরছি ...

আমি বুঝি তুমি শ্রমিক মারো মুনাফার স্বার্থে -
মালিক তোমার প্রভু, বাকি সব কিছু মিথ্যে ...
ধর্ম তোমার বিভেদ শুধুই, শোষণের হাতিয়ার;
রাষ্ট্র তুমি শোষণযন্ত্র, শোষকের হাতিয়ার ......

রাষ্ট্র তুমি শোষণযন্ত্র, শোষকের হাতিয়ার ......
রাষ্ট্র তুমি শোষণযন্ত্র, শোষকের হাতিয়ার ......
রাষ্ট্র তুমি শোষণযন্ত্র, শোষকের হাতিয়ার ......

আমি জানি - দেখি - বুঝি সবই, বলি নাতো কিছুই -
মধ্যবিত্ত অনুভূতি দেয় শুধু টান পিছু ...
আমি জানি - দেখি - বুঝি সবই, মানুষের ঠাই নাই !
চুটিয়ে নয় গুঁটিয়ে বাঁচি, লজ্জা আমার নাই ...

তাই, 

বাঁচার মত বাঁচিনি বলেই বেঁচেও মরে আছি -
সময়কালে রুদ্ধশ্বাসে ধুঁকে ধুঁকে মরছি ...
বাঁচার মত বাঁচিনি বলেই বেঁচেও মরে আছি -
সময়কালে রুদ্ধশ্বাসে ধুঁকে ধুঁকে মরছি ...
বাঁচার মত বাঁচিনি বলেই বেঁচেও মরে আছি -
সময়কালে রুদ্ধশ্বাসে ধুঁকে ধুঁকে মরছি ...

রাষ্ট্র তুমি (Practice Version)

খুব বেশি দিনের হিসেব নেই, হিসেব নেই আসল সংখ্যারও। যতটুকু আছে সেটা সরকারী হিসেব মোতাবেকই, পুরনো খবরের কাগজ ঘেঁটে কিছু পরিসংখ্যান। অথচ সেটুকুও কত ভয়াবহ হতে পারে তার চিন্তা আছে কি? ১৯৯০ থেকে ২০১৩ - নিহত প্রায় ২,২৩৬ জন অথবা তারও বেশি; আহত, নিখোঁজ এরা বলতে গেলে পরিসংখ্যানের বাইরে ... কী বীভৎস, কী ভয়াবহ এই রাষ্ট্রের চেহারা! শুধু গার্মেন্টস শিল্পেই শ্রমিকদের এহেন অবস্থা আমাদের চিরাচরিত উন্নয়নের আসল দশা উন্মোচন করে না? 

করা উচিত ছিলো, কিন্তু বোধহয় করে না। আমরা মধ্যবিত্তরা শুধু তাদের চোখের জলে, ঘামের দরে, পোড়া মাংস আর রক্ত মাড়িয়ে স্বপ্ন সাজাই ... আর উঁচুতলার রুই-কাতলারা আমাদের সবাইকে রাখে মোহে। এটা ঠিক আমাদের দ্বারা আর যাই হোক শ্রমিক অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে শামিল হওয়া বেসম্ভব। তবে এটাও ঠিক, শ্রমিক জনতার দ্বারা তা সম্ভব এবং একদিন না একদিন তারা ঘুরে দাঁড়াবেই।

দয়াগঞ্জে মোটর শ্রমিকদের সাথে দীর্ঘক্ষণের এক আড্ডায় শুধু এটা বুঝতে সক্ষম হয়েছিলাম, তাদের অস্ত্র বলতে বুক ভরা ক্ষোভ, পরে সদরঘাটে কুলি-মজুরদের সাথে আড্ডার ফলও একই ... ক্ষোভ, ক্ষোভ আর ক্ষোভ। তাই এককথায় বলতে গেলে বলা যায়, শ্রমিকেরা ভালো নেই। তারা আর যাই হোক মানুষের মর্যাদা পায় না; পার্থক্য এতটুকুই যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিক্ষোভেরা এক হতে পারছে না। সময়ের হাত ধরে পার করে চলা সংগ্রামী জীবনটুকুকে যেদিন তারা সাংগঠনিক ভিত্তি দেবে সেদিন পাশা উল্টাবে। 

হয়তো বলবেন স্বপ্ন, হয়তো মরীচিকা ... কিন্তু সেই স্বপ্নের প্রত্যাশাটুকু খাঁটি, যুক্তিযুক্ত ... প্রতীক্ষা শুধু জাগবার ...

_______________
___________________

দূরে বহুদূরে আমি দাঁড়িয়ে,
তোমার চোখের জলে স্বপ্ন গড়ে ...
জমাট রক্তে পা মাড়িয়ে,
সিঁড়ি ধরে আরো উঁচুতে!

জানি তুমি ফের ফিরবে -
ছোপ ছোপ রক্ত, ভাঙ্গা পাঁজরে;
নয়তো বেওয়ারিশ অনুভূতি বুকে,
ফের হারানোর কান্না ভুলে ...

অব্যক্ত ক্ষোভের পাখিরা
মেলে না আজও ডানা ...
মুক্তি খোঁজে দিশেহারা -
হারিয়েছে সকল চাওয়া!

জানি তুমি ফের ফিরবে এ নগরে -
আমি রবো সেই চেনা ভীড়ে!
ছুঁইনি কখনো তোমার কোন ব্যাথা,
তবু তুমি থেকো না নীরবে ...

অব্যক্ত ক্ষোভের পাখিরা
মেলবেই মুক্তির ডানা ...
দাবী আদায়ের অনলে
শোধ হবে সকল দেনা!

__________________
________________________

// প্রতীক্ষা ... // © প্রীতম অংকুশ

প্রতীক্ষা (Practice Version)

গার্মেন্টসে গার্মেন্টসে চলছে বিক্ষোভ। চলে বিক্ষোভ। চলবে নাই বা কেনো?

শ্রমিক পোড়ে, শ্রমিক মরে, শ্রমিক ধুঁকে ... আয়েশ শুধু মালিকদের, আমার মত মধ্যবিত্তের! তাদের জীবন জীবন না? আমাদের রাষ্ট্রীয় শোষণে তো মনে হয় তাদের জীবন এক নির্মম অভিশাপ বৈ কিছু না ...

বাড়ি ভাড়া বাবদ ৯৬০ টাকা; চিকিৎসা ফি ২৪০ টাকা; ২,৪০০ টাকায় সারা মাস নিজের সাথে সাথে পরিবারকে টানা ... কেমন জানি জীবন নিয়ে প্রহসন প্রহসন গন্ধ পাওয়া যায়! তার উপর ঊনিশ ঘন্টা শ্রম দিয়ে জ্বলে পুড়ে ছারখার হওয়া তো নিত্যকর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে! বিচার নেই, আচার নেই, নেই ক্ষতিপূরণ-ও! আহ সেলুকাস ... নেই আমাদের মাথাব্যাথাও।

যত যাই হোক না কেনো, দাবী একটাই, ন্যূণতম মজুরী আট হাজার টাকা চাই। খাদ্য-বাসস্থান-চিকিৎসা'র মত ন্যূণতম অধিকারের নিশ্চয়তা চাই। বিক্ষোভ চলুক, বিদ্রোহ চলুক; একদিন না একদিন এই অল্প অল্প স্বপ্নেরাই ডানা মেলবে আকাশে ... 





  
করবে তুমি-ই জীবন শোষণ
মরবে মানুষ মিছে -
সিঙ্গাপুরে শপিং তোমার
রক্ত তোমার হাতে।

বলবে তাও উস্কানি সব
ঠিক আছে সব-ই ঠিক!
ন্যূণতম মজুরীর ঐ 
দাবিটাই বেঠিক!

দেবার বেলায় ধানাই পানাই
নেবার বেলায় ঠিক!
ছ'শো টাকার অপমানের
ঝালটা বুঝে নিক!

হাজার হাজার প্রতিশ্রুতি
ভোট শেষে উবে যায়
মে দিবসের সংগ্রাম গাঁথা
উৎসব বনে হায় !!!

ঊনিশ ঘন্টা শ্রম শেষে
পোড়া মাংস থেকে যায়!
লাশেদের ভীড়ে জীবন
পরিসংখ্যান হয়ে রয়!

বলবে তাও উস্কানি সব
ঠিক আছে সব-ই ঠিক!
ন্যূণতম মজুরীর ঐ 
দাবিটাই বেঠিক!

যতই করো টালবাহানা
দাবী একটাই ...
ন্যূণতম মজুরী -
আট হাজার টাকা চাই।

দেবার বেলায় ধানাই পানাই
নেবার বেলায় ঠিক!
ছ'শো টাকার অপমানের
ঝালটা বুঝে নিক!

যতই করো টালবাহানা
দাবী একটাই ...
ন্যূণতম মজুরী -
আট হাজার টাকা চাই।

// ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

© প্রীতম অংকুশ

উল্টো ঘুড়ি _ Pritom