বৃষ্টি হচ্ছে। মনে মনে ভিজে যাচ্ছে শহর
কাক ও কেতকীর জানলা যাচ্ছে ভিজে
বৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও কোনখানে ঘনীভূত
মেঘের আস্তরে, যেখানে নীরহীন পাখি
এসেছে, বৃষ্টি হচ্ছে- ভিজে যাচ্ছে দেয়াল
সবুজ তর্মুজের নিচে যেতে দাও, ইশারায়
মেনে চলি বিবিধ সংবিধান, বৃষ্টি হচ্ছে
চোখ হতে মরুভূমি হয়ে ঝরে অশ্রুজল
মানে কোথাও কোন প্রেমের রেশ নেই?
কেবল একে অন্যকে পার করে, বেদনার
তীরে এসে চোখে দেখছে শুধু, বৃষ্টি হচ্ছে
এই মেনে বেড়িয়ে যাবো শহরের সমস্ত চোখ।

সংকেতে পার করেছি, রাত্রি অনাগত
বিবিধ নীলিমা আমাকে ধোঁকা দিয়ে যাবে
যেটা স্বাভাবিক। তবুও আমরা আসি ছুটে
প্রকৃত অন্তরবন হতে, যেখানে শেকড়ের বীজ
ধাক্কা দিয়ে উঠছে ক্রমশ, আমিও কম যাইনি
বেড়ালগুলোকে শুধু নিয়মিত খেতে দিই
কুকুরকে শোনাই নিজের কথা
যে আমাকে বুঝেও বোঝেনি,
এমনকি মাদী কুকুর- যাদের অনেকেই
আমাকে ঘৃণা করে, আমি তাদের ঘৃণা
ভালোবেসে, সকালে বাসি ভাত খেয়ে-
সংকেতে পগারপার হয়ে যাই।

নিজের কথা মনে হলে নিজেকে উল্লুক লাগে
যে বর্ষাতে ভেজার ছলে মিশেছিলাম জলে
সেও এখনি, কখনো- হাতে বর্শা নিয়ে ছুটে
আসে। আমি ক্রমশ টাইম মেশিনে পিছিয়ে
যাই। তোমার কথা মনে হলে নিজেকে বিশ্রী
লাগে। দুর্গন্ধময় জীবন সুবাসিত হয়ে ওঠে।

ক্রমশ ভাবতে থাকা ভালো, অদ্ভুত কিছু রস
বেড়িয়ে যায়। মনে মনে নিজেকে নিজের থেকে
বিচ্ছিন্ন লাগে, আমি তোমার প্রথম পুরুষ
হয়ে উঠি। তারপর একলা লাগলে সিগারেট ধরাই
দুচোখ ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসে রোদ কোমলে
আমি হারিয়ে যাই, মায়াজালে। যে কোন পর্দা
চিরে বেড়িয়ে আসতে ইচ্ছে করে, অনাগত শিশুর
মতো- নিজেকে পেলে আমি ভিন্ন মানুষ সাজাই।

সহসা হেলে পড়ে ঝাউ, বালিতে চোখ ঝরে
কিলবিল করে ওঠে গ্রামীণ সন্ধ্যার মতো ডাক
নারী, তোমার নাভিতে পড়ে থাকা আঙুর
আমাকে ডাকে, আমার তবে চলে যাওয়া উচিৎ
প্রকৃত গ্রন্থপঞ্জিতে। বেহালার চেয়ে মধুর প্রেম
আর নেই। পৃথিবীর সব ভালোবাসা একদিন
ফুরিয়ে যায়। যতটা না ধরে রাখে এক আত্মকামী
তারচে বেশি ছিলো তোমার প্রতি অভিমান
সে এক বিপর্যস্ত জ্বরের অসুধ, আমার দীর্ঘশ্বাসে
শহর নেবে, যায়। বাসের টিকিট কাটতে বেলা
ফুরিয়ে যায়। কোথাকার কোন মঙ্গলে এক সন্যাস
পাখিদের গান শুনতে শুনতে ও বিমূঢ় গুঞ্জনে
গৌতম সেজে বটবৃক্ষ ছায়াতলে বসে থাকে।
আকাশের দিকে তাকালে চিল উড়ে যায়
পুরোনো বকের মতো, নিবির বিড়াল
চেয়ে চেয়ে চোখের করছে আরাধনা, অথচ
নিবির গন্ধে তোমার হাস্নাহেনা ভরে গেছে
যেন কোন এক ডুবন্ত জাহাজের নাবিক
যে সমুদ্র হতে উঠে এসে মেলে ধরবে গোলাপ
তারাদের মাঝেমাঝে অভিমান হয়, অন্যের
কথা ভেবে। নক্ষত্র জ্বেলেও কোন কোন
প্রেমিকা একা মুখ ঢেকে রাখে, তার চোখে
চোখ রাখা যায় না, তবে কেন প্রেমিকা হবে
অপরের। আমি মানতে পারিনা প্রেমের অসুখ
চর্বিতে জমে থাকা তৈলের ঘটিও মাঝেমাঝে
পর্ণপৃষ্ঠার পেজ আটকিয়ে দেয়, ভেতরে ভেতরে
কেউ কেউ মৃত্যু হাতে নিয়েই জন্মায়, জন্মান্ধ যে
তার জন্য আমার অসুখ বাড়ে দ্বিগুণ হারে
তাকে একটি ভোরের শিউলিতলা উপহার দিতে
ভালো লাগে। প্রাচীন বাড়িগুলোর মতো দুর্বোধ
কোন এক বুড়ো সেজে একা একা বসে থাকি
কেউ জানাতে আসেনা সুখ, কেউ জানাতে আসেনা
দুঃখ। কেবল হৃদয় হতে ক্রমশ গুড়িয়ে দিয়ে যায়
মস্তিষ্কজাত প্রাণীকুল। হারা হয়ে গেলে কখনো
ভুল হয়, নিজেকে শোধরাবার জন্যই। তবুও সে ভুল
কখনো আমার ঘুমন্ত প্রেমিকা আমাকে ঠেলে
দিয়ে চলে যায়, আমি একা মুর্খের মতো একাকী পড়ে
থাকি। বেলা গড়িয়ে যায়, সন্ধ্যা আসে সান্ধ্যপ্রদীপ
হাতে, কখনো মোম অথবা ছাইদানি হয়ে, মরিচ অথবা
মায়ের হাতের বানানো নুন দিয়ে ভাত খেতে খেতে
আমরা ভুলে যাই কেবল আমাদের অনাদি সংকট।

মেনে চলা বাধ্য কোন নিয়মের ভেতরে থাকি না
সমস্ত বিশ্রীঙ্খলাকে ছিন্নকেশ করে, উড়ে যেতে
থাকি। যখন সবাই স্রোতে ভাসায় গা
তখন চুল এড়িয়ে তুমিও কি সমুদ্র নিয়ে বসে থাকো?

বৃষ্টি ও বেদনার কথাঃ মেহেদি হাসান তন্ময়

AudioMix

বৃষ্টি ও বেদনার কথাঃ মেহেদি হাসান তন্ময়

যে কোন বেদনার ফল, সুবাসিত হতে পারে
লাল সূর্য যেমন তুলে রাখে রসজ বিন্দুগুলো
অথচ কামার্ত তোমার দুটি শূন্য চোখের ভাজে
হাওয়ায় ভেসে যায় উদয়ী প্রিয় অবসর মুহুর্ত।

আমাকে দূরে ঠেলে, কি পেলে বলো- কবির নাম
এক অন্ধকার মৃত্যু, দুটি ঠোট চুমুতে লেগে যায়
অথচ অজানার চুম্বকে হারাতে চায় সবুজ পারাবত ।
সে দুঃখ কে যাপন, করে- প্রকাশিত ভাষায় তুমি
এক অজানা গন্তব্য, যেখানে মদ খেয়ে উৎসব করে-
দশটি শুদ্ধ মাতাল প্রেমিক

একজন যে তোমার নিতম্ব ছুঁয়েছিলো,
যে ধরেছিলো তোমার হাত ও প্রিয় চঞ্চু
তোমার উঠানে যে লাগিয়েছিলো দোল
উৎস ও বন্দরে আনিয়েছিলো অনুকম্পা অনুরণন
যে পাগল বিষ তুলেছিলো সবুজ মুখে?
তোমার যে পাখি গান করে না-
যে বাউল দুপুরে গমক্ষেত ধরে ধরছিলো গান
যে পথ তোমাকে নিয়ে গিয়েছিলো অবাক ছন্দশৌলিতে।

আর আমাকে সবদিকে ছড়িয়ে মৃত্যু উপেক্ষা করে শ্বাস নিচ্ছি-
যেখানে কেউ আর তোমার কথা মনে করে দেয়নি আমায়।
ভুলে যাওয়াও প্রচণ্ড এক অসুখ, মুখোমুখি হলে যায় বোঝা
আমার ছিন্নভিন্ন করে উড়ে চলেছো উড়ন্ত চিল, সোনালী সমুদ্র
যখন তুমি আসো, সূর্য ও কোমল রোদ ও রাত্রি জ্যোৎস্না হয়ে যাই ।।

বেদনার ফলঃ মেহেদি হাসান তন্ময়

MeHa Tonmoy